টেলিভিশন বা জাতীয় জীবনে টেলিভিশনের ভূমিকা বা টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষার ভূমিকা: টেলিভিশন আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। ল্যাটিন শব্দ 'টেলি' মানে দূরত্ব এবং 'দৃষ্টি' শব্দের অর্থ দৃষ্টি। এই দুটি শব্দের সংমিশ্রণ হল "টেলিভিশন"। যখন দুটি শব্দের অর্থ একত্রিত হয়, তখন তা দূরদর্শিতা বা দূরদর্শনে পরিণত হয়। টেলিভিশনকে দূর থেকে দেখা গেলেও শব্দটির অর্থ অনুমান করা যায়। টেলিভিশনের আবিষ্কার: ইংল্যান্ডের জন লেগি বেয়ার্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেনকিন্সই প্রথম তারের মাধ্যমে ছবি এবং শব্দ সফলভাবে প্রেরণ করেছিলেন। সময়টা ছিল 1925যাইহোক, এর আগে, আলেক বৈদ্যুতিক কোষ ব্যবহার করে প্রাথমিক পর্যায়ের টেলিভিশন আবিষ্কার করেছিলেন। আর। কেরি 184 সালে, জার্মান বিজ্ঞানী পল নিপকো। স্ক্যানিং ডিস্ক টেলিভিশন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ভ্যাদিমির জোরিকি এবং ফিলি ফার্নেসওয়ার্থ বিশের দশকে টেলিভিশন ক্যামেরা চালু করেছিলেন, যা বেয়ার্ড এবং জ্যাকের পদ্ধতি উন্নত করেছিল। পরবর্তীতে "ইমেজ ইকোনমিক্স" এবং "কাইনস্কোপ" পদ্ধতি ব্যবহার করে টেলিভিশন আরও উন্নত করা হয়। 1936 সালে, ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে টেলিভিশন সম্প্রচার করে। টেলিভিশন নিয়ে এখনও পরীক্ষা -নিরীক্ষা চলছে; এর অনিবার্য ফল হল বর্তমান আধুনিক স্মার্ট টেলিভিশন। টেলিভিশনের কাঠামো: টেলিভিশনের ক্যামেরায় ধারণ করা ছবি। এটি 'ভোল্টেজ সিগন্যাল' নামে একটি বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়। এটাকে আমরা ভিডিও সিগন্যাল বা ইমেজ সিগন্যাল বলি। টেলিভিশন। .সেই ইমেজ সিগন্যাল টাওয়ার থেকে একটি বিশেষ উপায়ে প্রেরণ করা হয়। কাছাকাছি. আমাদের টেলিভিশন অ্যান্টেনা সেই ইমেজ সিগন্যাল পায়। টেলিভিশনের ভিতরে পাঠায়। টেলিভিশনের পর্দা কাচের তৈরি। যাইহোক, কাচের অভ্যন্তরীণ পিছনে একটি ফ্লোরোসেন্ট পদার্থ থাকে যা ফসফর নামে পরিচিত। যখন একটি ইলেকট্রন কণা সেখানে আঘাত করে, তখন এটি ছড়িয়ে পড়ে। দূরদর্শনে ইলেকট্রন তৈরির ব্যবস্থা আছে। সেখানে একটি ইলেক্ট্রন একটি বন্দুক থেকে বের হয়, ইমেজ-সিগন্যালের তীব্রতা অনুযায়ী কমবেশি ইলেকট্রন কারেন্টের একটি বর্শা। সব ঘটনা ঘটে আলার গতিতে, অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে তিন লাখ কিলোমিটার গতিতে। ফলস্বরূপ, সবকিছু একবারে ঘটেছে বলে মনে হয়। টেলিভিশন কেন্দ্র থেকে সাউন্ড সিগন্যাল এবং ইমেজ সিগন্যাল একযোগে প্রেরণ করা হয়। দুটি সিগন্যালের সংমিশ্রণে একই সাথে ছবি দেখা ও শোনা সম্ভব হয়। বর্তমানে, LED প্রযুক্তি সহ স্মার্ট টেলিভিশনগুলি বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। এর গঠন কিছুটা ভিন্ন এবং এর গুণাগুণ অনন্য। বহুমুখী ব্যবহারও এই ধরনের টেলিভিশনের অন্যতম দিক। টেলিভিশনের ব্যবহার: টেলিভিশন আধুনিক জীবনের অন্যতম প্রয়োজনীয় হাতিয়ার। এটি বিশ্বের সব উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আমাদের দেশে টেলিভিশন চালু হয়েছে। প্রায় ত্রিশ বছর আগে। এখানে টেলিভিশন বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অতি সম্প্রতি, গণশিক্ষা, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, পরিবার পরিকল্পনা এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সম্পর্কিত কর্মসূচী যুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে টেলিভিশন: টেলিভিশন, সম্প্রচার এবং সামাজিক সচেতনতা কর্মসূচির মাধ্যমে তথ্য প্রদান ছাড়াও এই মাধ্যমটি সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক ও উচ্চশিক্ষার প্রসারে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। আমাদের দেশে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম এবং চিকিৎসা কার্যক্রম সম্পর্কিত বেশ কিছু কর্মসূচি রয়েছে। এই প্রোগ্রামগুলি আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বিকল্প হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। জনমত গঠনে টেলিভিশনের ভূমিকা: জনমত গঠনে টেলিভিশন অনন্য সাধারণ ভূমিকা পালন করে। যেকোনো বিষয়ে জনমত গঠনের জন্য টেলিভিশনে প্রচার চালানো হলে এটি সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। .মানুষ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইস্যুতে তাদের মতামত দিতে পারে। মানুষের সামনে টেলিভিশনের বিভিন্ন অস্পষ্ট ধারণা রয়েছে। সচেতনতা তৈরিতে টেলিভিশনের ভূমিকা: বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ শিক্ষা পায়নি। তাই তারা নিজেদের এবং জাতির বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবগত নয়। টেলিভিশন মানুষের সামনে সামাজিক সচেতনতার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে। টেলিভিশন এইডস, আর্সেনিক, পরিবার পরিকল্পনা, পরিবেশ দূষণ, বিভিন্ন কুসংস্কার এবং রাগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায়। একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম হিসেবে মানুষ টেলিভিশনের মাধ্যমে সহজেই নতুন বিষয় জানতে এবং পরিচিত হতে পারে। অসুবিধা: টেলিভিশনের কিছু অসুবিধা আছে, ঠিক যেমন এটি আমাদের শিক্ষা ও শিক্ষাদান করে। বেশি সময় টেলিভিশন দেখার ফলে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। ডিশ অ্যান্টেনার প্রভাবে আজকাল অনেক কুৎসিত ছবি টেলিভিশনেও দেখানো হচ্ছে। এই সব ছবি শিশুদের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। উপসংহার: টেলিভিশন একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। টেলিভিশন সুস্থ যোগাযোগের পাশাপাশি শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গড়ে উঠলে সমাজ, জাতি ও দেশ উপকৃত হবে।
Tags:
প্রবন্ধ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন